ফোরাম
স্বাধীনতা বা মুক্তিযোদ্ধে আমার পরিবারের ভূমিকা""
আমি স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখিনি । তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখার দুঃসাহস আমার নাই । তবে আমার পরিবার ও গুনিজনদের কাছে শুনেছি মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের বীরত্বের কথা ।
আমার বাবা ছিলেন তাড়াইলে আওয়ামীলীগের অভিভাবকদের মধ্যে অন্যতম এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সক্রিয় নেতাদের মধ্যে একজন । শ্রদ্ধেয় তিন বড় ভাই ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ।
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর ০৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ পর্যন্ত আমার পিতা হাছান আহমেদ হাছু বেপারী (সাবেক চেয়ারম্যান) সাহেব স্বাধীনতার পক্ষের প্রত্যেকটি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ।
৭০-এর নির্বাচনে আজকের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেট তাড়াইলে শতকরা পঁচানব্বই নৌকা প্রতিকে ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন । সেই তাড়াইল নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আমার পরিবার (যেমন মহামান্যের সংস্পর্শে গেলে বুঝা যায় যে অতীত কে স্মরণ রাখার মত অনেক বড় মনের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারি ব্যক্তিত্ব )।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাড়াইলের হিন্দু - মুসলমান নির্যাতিত নারী - পুরুষদের নৌকা যুগে ভারতের আশ্রয় শিবিরে নিরাপদে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন আমার বাবা । পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে আমার পিতা আট সন্তানের মধ্যে উপযুক্ত তিন ছেলেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়ে ছিলেন । বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলার শার্দুল আব্দুল হামিদ এডভোকেট ছিলেন আমার বড় ভাই সাবেক তাড়াইল থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন রঙ্গু মিয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর। উনারা দু'জন ভারতে মুক্তিযুদ্ধের দুইটি ট্রেনিং সেন্টারের দায়িত্ব পালন করেন এবং তাড়াইল করিমগন্জে ও হাওড় এলাকার তরুণ যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য সংগঠিত করেন । আমার আরেক বড় ভাই বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও তাড়াইল থানা শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা, নূরুল হক লালমিয়া এবং মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে তাদের জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক-বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন । ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করে ।
তিন সন্তান কে মুক্তিযোদ্ধে পাঠিয়ে দিয়ে স্বপরিবার কে আমার বাবা ভারতে আশ্রয় শিবিরে পাঠিয়ে দেন । এদিকে মুক্তিযুদ্ধে তিন সন্তানকে পাঠানোর দায়ে এবং আমার বাবা স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধীরা পাকিস্তানি মিলিটারিদের সাথে নিয়ে তাড়াইলে সর্ব প্রথম আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে ।
দীর্ঘ নয় মাস পর দেশ শত্রুমুক্ত হলে আমার বাবা তার নিজ গ্রামে সাচাইল এসে দেখে অবশিষ্ট কিছুই নাই । স্বাধীনতা বিরোধীরা সব লুট করে নিয়ে গেছে । ফেলে রেখে যাওয়া এলাকার নিরীহ হিন্দু - মুসলমানদের সম্পত্তি দখল করে জালিয়াতির মাধ্যমে কিছু সংখ্যক দালাল আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায় । আমাদের পরিবার হয়ে যায় নিঃস্ব ।
তারপর যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে পুনর্গঠন করার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় ঠিক তখনও ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীরা থেমে থাকেনি । তারা নতুন করে কৌশল অবলম্বন শুরু করে এবং বিভিন্ন কৌশলে স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে থাকে ও নতুন রূপ ধারন করে ।
আমাদের পরিবার কে স্থানীয় রাজনীতি থেকে বঞ্চিত করার কুটকৌশল চালাতে থাকে । আমার বাবা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার সুযোগে আবারও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে তারা । এভাবে ধীরে ধীরে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রদের উত্তর সুরিরাও আজ আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে কিছু স্থান দখল করেছে ।
আপনাদের জ্ঞাতার্থে একটি কথা বলে রাখি - স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে আমার পরিবার কোন স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করেনি । কেন করেনি ? কারণ ওরা আমাদের ব্যক্তিগত শত্রু নয় । ওরা স্বাধীনতার শত্রু, ওরা বঙ্গবন্ধু তথা নৌকার শত্রু এবং দেশের শত্রু । তাদের সাথে আর যাই হোক আত্মীয়তা না ।
আজ মনের ভিতর প্রশ্ন জাগে দেশকে ভালোবেসে, দেশের প্রতি মায়া মমতা দেখিয়ে কি পেলাম আমরা? পশ্চিমা শাসকগোষ্টির দীর্ঘদিন গোলামি করার পর, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজও হায়েনাদের হাত থেকে মুক্ত হতে পারছে না কেন?
আজ শুধু আওয়ামীলীগ নয় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, গনতান্ত্রিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলোতেও ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীরা সাধারণ মানুষের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে । যখন দেখি স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের লোকজন মুজিব কোট পড়ে জয়বাংলা শ্লোগানে জাতীয় প্রোগ্রামে নেতৃত্ব দিতে আসে,তখন মনের ভিতর ঘৃণা জন্মায় এবং চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে হে স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক আপনি দেখে যান আপনার সোনার বাংলা আজ কারা কুলশিত করছে । যারা সত্তরের নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করেছিল এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ত্রিশ লক্ষ বাঙালির জীবন ও দুই লক্ষ মা বোনদের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে তাদের হাতে আজ স্বাধীন বাংলার পতাকা, আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে ? তারা মিটিংয়ে সামনে সারিতে বসে দাঁত বের করে নিটকায়! উপহাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ।
কি চমৎকার এ দেশের মানুষ ! কি চমৎকার রাজনীতি শিখেছে এ দেশের রাজনীতিবিদরা । বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে হলে বঙ্গকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একার পক্ষে সম্ভব না । সকল দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি কে এক পতাকা তলে এগিয়ে আসতে হবে এবং নতুন প্রজন্মকে চিনতে হবে জানতে হবে স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষের পরিবার গুলোকে।
(দয়া করে লিখাটা পড়ে গঠনমূলক মন্তব্য চাই)